বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক জহির রায়হান । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিখোঁজ ভাইকে খুঁজতে গিয়ে নিজেই চিরকালের জন্যে নিখোঁজ হয়ে গেলেন তিনি। একটি দেশ/একটি সংসার/একটি চাবির গোছা/একটি আন্দোলন/একটি চলচ্চিত্র…এই স্লোগান নিয়ে ১৯৭০ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানে মুক্তি পেল তাঁর একটি ছবি—জীবন থেকে নেয়া । পূর্ব পাকিস্তানে এই ছবিতে করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হয় আমাদের জাতীয় সংগীত। তিনি প্রথম জীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দশ জনের খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হয়েছিল। প্রথম দশজনের মধ্যে তিনি ছিলেন জহির। সে সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পারিবারিক নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। তবে ছেলেবেলায় তাঁকে ডাকা হতো জাফর বলে। বাবা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ। মা সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সঙ্গে কলকাতা হতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্থানান্তরিত হন। ছেলেবেলা কেটেছেন কলকাতায়। সেখানে পড়াশুনার হাতেখড়ি হয়। ১৯৪০ সালে তিনি কলকাতা মডেল স্কুলে ভর্তি হন। তাঁর বাবা তখন কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। মডেল স্কুলে তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর তাঁকে মিত্র ইনস্টিটিউশনে (মেইন) ভর্তি করা হয়। এখানে সপ্তম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি আলীয়া মাদ্রাসার অ্যাংলো-পার্শিয়ান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর বাবার সঙ্গে মজুপুর গ্রামে চলে আসেন।
পড়াশোনা
স্কুলজীবনে অধিকাংশ সময় কেটেছেন কলকাতায়। দেশভাগের পর তিনি গ্রামের আমিরাবাদ স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। গ্রামের আমিরাবাদ হাই স্কুল থেকে ১৯৫০ সালে তিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ঢাকা কলেজে পড়াশুনার সময় তিনি ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৩ সালে জহির রায়হান ঢাকা কলেজ থেকে আই.এসসি. পাস করেন। ওই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। এক বছর পর তিনি অর্থনীতি ছেড়ে বাংলা বিভাগে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
ব্যক্তিগত জীবন
পাঁচ পুত্র ও তিন কন্যার জননী সুফিয়া খাতুন। তিনি সন্তানদের শিক্ষার ব্যাপারে ছিলেন অত্যন্ত সর্তক ও যত্নশীল। তার প্রথম সন্তান শহীদুল্লাহ কায়সার (১৯২৭-১৯৭১), দ্বিতীয় নাফিসা কবির, তৃতীয় জহির রায়হান, চতুর্থ জাকারিয়া হাবিব, পঞ্চম সুরাইয়া বেগম, ষষ্ঠ শাহেনশা বেগম, সপ্তম ওবায়দুল্লাহ, সর্বকনিষ্ঠ সাইফুল্লাহ। জহির রায়হান জীবনে দু’বার বিয়ে করেন: ১৯৬১ সালে সুমিতা দেবীকে এবং ১৯৬৬ সালে তিনি সুচন্দাকে বিয়ে করেন, দুজনেই ছিলেন সে সময়কার বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। দুই স্ত্রী’র একজন সুমিতা দেবী। এই প্রয়াত অভিনেত্রীর দুই ছেলে বিপুল রায়হান ও অনল রায়হান। দুজনেই প্রতিষ্ঠিত নাট্য নির্মাতা। আরেক স্ত্রী সুচন্দা’র ছোট ছেলে তপু রায়হানও অভিনেতা। তিনি ‘সবুজ কোট কাল চশমা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। জাহির রায়হানের ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার।
কর্মজীবন
জহির রায়হান বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তার সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জীবন শুরু হয়। ১৯৫০ সালে তিনি যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি খাপছাড়া, ড.আলিম চৌধুরী সম্পাদিত যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে প্রবাহ পত্রিকায় যোগ দেন। ‘এক্সপ্রেস’ পত্রিকার কার্যকরী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া জহির রায়হান ‘সমকাল’, ‘চিত্রালী’, ‘সচিত্র সন্ধানী’, ‘সিনেমা’, ‘যুগের দাবী’ প্রভৃতি পত্রিকার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি ‘চিত্রালী’-তে ‘প্রবেশ নিষেধ’ শিরোনামে কিছুদিন একটি ধারাবাহিক ফিচার লিখেছিলেন। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্র জগতে তার পদার্পণ ঘটে ১৯৫৭ সালে, জাগো হুয়া সাবেরা ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে। তিনি সালাউদ্দীনের ছবি যে নদী মরুপথেতেও সহকারী হিসেবে কাজ করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাকে এ দেশ তোমার আমার এ কাজ করার আমন্ত্রণ জানান; জহির এ ছবির নামসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। ১৯৬০ সালে তিনি রূপালী জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কখনো আসেনি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র সঙ্গম নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র বাহানা মুক্তি দেন। জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১ ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলন তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়াতে। তিনি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। কলকাতায় তার নির্মিত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়ার বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন।
সাহিত্য জীবন
ছাত্রজীবনেই তিনি লেখালেখি শুরু করেন। ১৩৬২ বঙ্গাব্দে তাঁর প্রথম গল্পসংগ্রহ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয়। তাঁর লিখিত অন্য বইগুলি হচ্ছে শেষ বিকেলের মেয়ে, হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী এবং আর কত দিন। এছাড়া তার বেশ কিছু ছোটগল্পও প্রকাশিত হয়। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে..
- সূর্যগ্রহণ (প্রথম গল্পগ্রন্থ। ১৩৬২ বাংলা)
- সোনার হরিণ
- সময়ের প্রয়োজনে
- একটি জিজ্ঞাসা
- হারানো বলয়
- বাঁধ
- নয়াপত্তন
- মহামৃত্যু
- ভাঙাচোরা
- অপরাধ
- স্বীকৃতি
- অতি পরিচিত
- ইচ্ছা অনিচ্ছা
- জন্মান্তর
- পোস্টার
- ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি
- কতকগুলো কুকুরের আর্তনাদ
- কয়েকটি সংলাপ (১৯৭১)
- দেমাক
- ম্যাসাকার
- একুশের গল্প
তিনি ১৯৭০ সালে প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকা দ্য উইকলি এক্সপ্রেস প্রকাশের উদ্যোক্তাদের অন্যতম। এ ছাড়া তিনি কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। হাজার বছর ধরে উপন্যাসের জন্য তিনি আদমজি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭২ সালে তাঁকে বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার প্রদান করা হয়।
রাজনৈতিক জীবন
রাজনৈতিক ঘটনা-আন্দোলন কিশোর জহিরকে নাড়া দিতো। জহির রায়হানের জন্মের কয়েক বছর আগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ঘটে গেছে, তার অভিজ্ঞতা মানুষের মন থেকে মুছে যাবার আগেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বিভাগ পূর্ব বাংলাদেশে তখন হিন্দু ও মুসলমান মধ্যবিত্তের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা চলছে জীবনের নানান ক্ষেত্রে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়, জহির তখন মিত্র ইন্সটিটিউটের ছাত্র। এই সময়ে আরো একটি দুর্যোগ নেমে আসে- ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ। এর মাত্র ক’বছর পরেই ’৪৬ সালে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটে। এই ঘটনাগুলো কিশোর জহিরের মনে প্রভাব বিস্তার করে।
’৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অনতিকাল পরেই পূর্বপাকিস্তানের শিক্ষিত মধ্যবিত্তের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। তারা অনুভব করে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের যাবতীয় সম্পদ, পুঁজি, ক্ষমতা সবই পশ্চিম পাকিস্তানিদের করতলগত-তারা ক্ষমতার উৎস নয়, ক্ষমতার সহায়ক ছাড়া তারা আর যে কিছুই নয়!
১৯৪৫ সালে ‘ভিয়েতনাম দিবস’-এর মিছিলে জহির অংশগ্রহণ করেন। সেই মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে অন্যান্যদের সঙ্গে তিনিও আহত হন। ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের মিছিলেও তিনি উৎসাহের সঙ্গে যোগ দিতেন। দেশ-বিভাগের পর গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের সক্রিয় সদস্য বসন্ত ভৌমিক ও ক্ষিতিশ চক্রবর্তীর সান্নিধ্যে আসেন। তার রাজনৈতিক চেতনায় এদের প্রভাব পড়েছিল নিশ্চয়ই। এরপর জহির চলে আসেন ঢাকায়। এ সময়ে অগ্রজ শহীদুল্লাহ কায়সারের দ্বারা সক্রিয় রাজনীতিতে অনুপ্রাণিত ও দীক্ষিত হন। এছাড়া বড় বোন নাফিসা কবীর ও তার স্বামী ড. আহমদ কবীরও জহিরের রাজনৈতিক চেতনাকে লালন করেছিলেন।
১৯৫৩ কী ৫৪ সালের দিকে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। এ সময়ে মনি সিংহের দেয়া রাজনৈতিক নাম ‘রায়হান’ গ্রহণ করেন। ছাত্রাবস্থায় রাজনৈতিক কারণে একাধিকবার কারারুদ্ধ হয়েছেন তিনি। প্রথমে ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময়ে কারাবরণ করেন। ২০ ফেব্রুয়ারী ঢাকা শহরে মিছিল, ধর্মঘট, জনসমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তদানীন্তন সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে।
২১ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দশ জনের খন্ড খন্ড মিছিল বের হয়। প্রথম দশজনের মধ্যে ছিলেন জহির রায়হান। ১৯৫২ সালের এই ঘটনা বর্ণনা করে তিনি লিখেছেন, “ছাত্রদের গ্রুপে ভাগ করা হলো। আমি ছিলাম প্রথম দশজনের ভেতর।… ১৪৪ ধারা ভাঙ্গা হবে। কিন্তু প্রথম ব্যাচে কারা যাবে? হাত তুলতে বলা হলো। অনেক ছাত্র থাকা সত্ত্বেও হাত আর ওঠে না। কারণ ক্যাম্পাসের বাইরে পুলিশ বন্দুক উঁচিয়ে পজিশন নিয়ে বসে আছে। ভাবখানা এই যে, বেরুলেই গুলি করবে। ধীরে ধীরে একটা দু’টো করে হাত উঠতে লাগলো। গুণে দেখা গেলো আটখানা। আমার পাশে ছিলো ঢাকা কলেজের একটি ছেলে। আমার খুব বাধ্য ছিলো। যা বলতাম, তাই করতো। আমি তুলে ওকে বললাম হাত তোল। আমি নিজেই ওর হাত তুলে দিলাম। এইভাবে দশজন হলো। (জীবনী গ্রন্থমালা (পৃষ্ঠা : ১৪), অমর একুশে বাংলা একাডেমীর নিবেদন : ১৯৮৮)
এই মিছিল অল্প কিছুদূর অগ্রসর হবার পরেই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। এ বছরই জুন মাসে শহীদুল্লাহ কায়সারকে ধরতে এসে পুলিশ জহিরকে ধরে নিয়ে যায়। সেবার তিনমাস কারাভোগ করেন তিনি। এরপরে তিনি ১৯৫৫ সালে গ্রেফতার হয়ে তিনসপ্তাহ বন্দী থাকেন। ১৯৫৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে জহির পুনরায় রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার হন এবং তিনমাস কারাগারে থাকেন।
পরে স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে পর্যন্ত তিনি প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তবে বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে তার যোগ ছিল বরাবরই। পার্টিতে নিয়মিত চাঁদা দিতেন বলেও জানা যায়। তার রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রতিফলন এ সময়ের বিভিন্ন রচনায় যেমন পাওয়া যাবে, তেমনি পাওয়া যাবে তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোতে। এ প্রসঙ্গে তার ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবির কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
চলচ্চিত্র জীবন
জহির ১৯৫২ সালে ফটোগ্রাফি শিখতে কলকাতা যান এবং প্রমথেশ বড়ুয়া মেমোরিয়াল স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তিনি চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। ১৯৬১ সালে তাঁর পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কখনও আসেনি’ মুক্তি পায়। তার পর একের পর এক তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র মুক্তি পেতে থাকে। তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে রয়েছে, কাজল, কাঁচের দেয়াল, বেহুলা, জীবন থেকে নেয়া, আনোয়ারা, সঙ্গম এবং বাহানা। জীবন থেকে নেয়া ছবিতে প্রতীকী কাহিনীর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসনকে চিত্রিত করা হয় এবং জনগণকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে উদ্বুদ্ধ করা হয়। ছবিটি উভয় বাংলাতেই মুক্তি লাভ করে।
পুরস্কার ও সম্মাননা
জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাস ১৯৬৪ সালে ‘আদমজী পুরস্কার’ লাভ করে। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলা উপন্যাসের ক্ষেত্রে বিশিষ্ট অবদানের জন্য তাকে বাংলা একাডেমী পুরস্কারে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়।
তৎকালীন পাকিস্তানে ১৯৬৫ সালে জহির রায়হান পরিচালিত ‘কাঁচের দেয়াল’ ছবিটি ‘নিগার পুরস্কার’ লাভ করে। এই ছবিটি ৭টি শাখায় পুরষ্কার জিতে নেয়। তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালকের সম্মান লাভ করেন।
১৯৭২ সালে তাসখন্দ চলচ্চিত্র উৎসবে তার ‘জীবন থেকে নেয়া’ এবং ‘স্টপ জেনোসাইড’ ছবি দুটিকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়। চলচ্চিত্র অবদানের জন্য বাংলাদেশের জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক (১৯৭৭) ও সাহিত্যের অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯২) প্রদান করা হয়।
অর্ন্তধান ও মৃত্যু
১৯৭১ সালে জহিরের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা প্রখ্যাত লেখক শহিদুল্লা কায়সার কে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা তাঁর বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে যায়। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি তিনি খবর পান যে, শহিদুল্লা কায়সারকে ঢাকার মিরপুরে রাখা হয়েছে।তিনি তাঁকে উদ্ধারের জন্য সেখানে যান। কিন্তু তিনি আর ফিরে আসেননি। ওই দিনটি জহির রায়হানের অন্তর্ধান দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
তথ্যসুত্র: উইকিপিডিয়া
No comments:
Post a Comment